শুষ্ক মৌসুমের এই সময়টিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীদের পানি ও খাবারের সংকট দেখা দেয়। বৃষ্টির পানি কিংবা কৃত্রিম পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছড়া ও খাল শুকিয়ে যাওয়া এই সংকট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে অবাধে বনের গাছ-বাঁশ উজাড় হওয়ায় দিন দিন এ সংকট তীব্র হয়েছে বলে জানায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি।
এদিকে বন বিভাগ জানিয়েছে সংকট মোকাবিলায় লাউয়াছড়া উদ্যানে কৃত্রিম পানির জলাধার তৈরির পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠানো হলেও প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। পানির সমস্যা সমাধান করার জন্য নতুন করে সুফল প্রজেক্ট নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট ছোট ছড়া ও খাল শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে এসব ছড়ায় পানি আসে। বৃষ্টি না থাকলে পানি থাকে না। ছড়াগুলো শুকিয়ে বালু বের হয়। এর আগে প্রাণীদের পানির জন্য কৃত্রিম ব্যবস্থা করা হয়। এগুলো ভরাট হওয়ায় একেবারে পানি নেই বনে। এসব ছড়া ও খালের পানি এবং খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, হরিণ, বানর, বুনো শূকরসহ বনের প্রাণী গুলো।
এ ছাড়া গত দুই দশকে লাউয়াছড়া বনের মূল্যবান গাছ উজাড় হওয়ায় ঘনত্ব অনেকটা কমে আসায় খাবার ও পানি সংকটে পড়ছে। খাবার ও পানির খুঁজে বন্যপ্রাণী অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। অনেক সময় পর্যটকেরা খাবার ছিটিয়ে দেন। এ জন্য প্রাণীরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পানির সংকট মোকাবিলায় লাউয়াছড়া উদ্যানে কৃত্রিম পানির জলাধার তৈরির সুফল প্রজেক্ট পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠানো হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। যার জন্য লাউয়াছড়া উদ্যানে পানির সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। বনের প্রাণীর জন্য কৃত্রিম পানির ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি কমলগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বনে পানি না থাকার কারণে প্রাণীদের খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা যায়। অনেক সময় প্রাণীরা লোকালয়ের চলে যায়। বন্য প্রাণীদের জন্য স্থায়ীভাবে পানির সমস্যা সমাধান করা হোক। এমনিতেই প্রাণীরা বিলুপ্ত হচ্ছে এখন আবার প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে খাবার পানি থাকে না। কৃত্রিমভাবে স্থায়ী পানির ব্যবস্থা দ্রুত করা হোক।
বন্যপ্রাণীর খাবার ও পানি সংকটের বিষয়ে লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে শুষ্ক মৌসুমে আমরা প্রাণীদের যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন ততটুকু করতে পারছি না। লাউয়াছড়া বনের ভেতর ছড়ার মধ্যে যেটুকু পানি আছে তা প্রাণীদের জন্য যথেষ্ট নয়। বন্য প্রাণীদের জন্য বিশেষ করে এই সময়ে কৃত্রিম পানির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। খাবার ও পানির সংকট থাকার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন প্রাণী খাবারের খোঁজে লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ে রাতে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে বনের ভেতরে পানির সংকট সমাধান করা হবে। এর আগেও পানি সংকটের কারণে কৃত্রিমভাবে জলধারা তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে অতিরিক্ত বালু আসার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছড়াগুলো ভরাট হয়ে যায়। আর কৃত্রিম জলধারাগুলোও ভরাট হয়েছে। প্রাণীদের পানির জন্য নতুন করে সুফল প্রকল্প নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে অন্যতম লাউয়াছড়া। পরিচিতির দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই এ বনের অবস্থান। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন এখনো বিখ্যাত।