বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, শেখ হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। বিষয়টি ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কথা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া নিয়েও।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, শেখ হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। বিষয়টি ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। এ সময় তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেও আখ্যা দেন।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বহাল রাখার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশকে সেক্যুলার হতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনার (সংবিধানে) ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে কিন্তু আপনি ইসলামকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রেখে দেবেন—দুটো বিষয় তো একসঙ্গে চলতে পারে না।’
এস কে সিনহা অর্পিত সম্পত্তি আইন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আপনার অর্পিত সম্পত্তি আইনের মতো আইন থাকতে পারে না, যা হিন্দু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। একইভাবে, হিন্দু মন্দির পরিচালনার জন্য আলাদা আইন থাকতে পারে না। কারও জন্য দায়মুক্তি নেই। যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সমতা বজায় থাকে তবেই হিন্দুরা বাংলাদেশে নিরাপদে থাকবে।’
এ সময় সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে আক্রমণের শিকার সব হিন্দু তো আর ভারতে আসতে পারবে না। মূলত আক্রান্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজির আলোকে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে সিনহা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের তৎকালীন—যখন তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন—ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল ‘অগণতান্ত্রিক’ ও ‘কর্তৃত্ববাদী’। মূলত এই অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধিতা করার কারণেই তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এস কে সিনহা শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা মানুষের ওপর ‘বর্বরতা’ চালিয়েছেন। সিনহা বলেন, ‘তিনি যদি বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে বহিষ্কার করতে পারেন, তাহলে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনের জন্য আর কী প্রমাণ লাগবে?’
শেখ হাসিনা পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যা হয়েছে তা বাংলাদেশের জনগণের অর্জন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা ৫৩ বছর ধরে ব্যর্থ হয়েছেন।’
উল্লেখ্য, এস কে সিনহা ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি আদালত অর্থ পাচার এবং বিশ্বাস লঙ্ঘনের একটি মামলায় দুর্নীতির দুটি অভিযোগে এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।