Logo

শাশুড়িকে ফাঁসাতেই নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিলেন মিম: পুলিশ

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৩ জুন ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | ১৭৫০জন দেখেছেন
রাজনগর বার্তা রিপোর্ট ::

Image

শাশুড়ি এবং স্বামী মিলে মিমকে পুড়িয়ে হত্যা করতে চায়, এমন একটি ঘটনা সাজাতেই চাচাতো বোনের স্বামীর সহযোগিতায় নিজের হাত-পা বেঁধে ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা সাজিয়েছিলেন হালিমা আক্তার মিম। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পরিকল্পনার ছন্দপতন ঘটে এবং অগ্নিদগ্ধ হন মিম আর পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মিমের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন মিমের চাচাতো বোনের স্বামী আরিফ হোসেন সিকদার। 

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে মিম হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইদুল ইসলাম।

এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পুলিশ মো. আরিফ হোসেন সিকদারকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। পরদিন সোমবার আরিফ হোসেন সিকদার পটুয়াখালী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আরিফ দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের হামেদ সিকদারের ছেলে।

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের শাশুড়ি ও স্বামীকে উচিত শিক্ষা দিতেই চাচাতো বোনের স্বামীকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন হালিমা আক্তার মিম। সে অনুযায়ী আগে থেকেই চাচাতো বোনের স্বামী মো. আরিফ হোসেন সিকদারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ঘটনার দিন সকালে আরিফ ঢাকা থেকে দুমকি যান। মিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের মধ্যে কেরোসিন দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়। মিম ঘরের এক কোণে মশারিতে আগুন দিয়ে আরিফকে ঘরের বাইর থেকে দরজার সিটকিনি দিয়ে বন্ধ করে চলে যেতে বলেন।’

এসপি আরও বলেন, ‘মিমের সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছুই এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে পরিকল্পনা ছিল আগুন গায়ে লাগার আগেই মিম ডাক-চিৎকার দেবে এবং আশপাশের মানুষ তাঁকে উদ্ধার করবে। তবে আশপাশের মানুষ আসতে দেরি করায় আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মিম অনেক বেশি অগ্নিদগ্ধ হন। অপর দিকে মিমের শিশুসন্তানটি যাতে নিরাপদ থাকে, সে কারণে ঘরের সামনের খাটে ছয় মাসের সন্তানকে রাখা হয়। এদিকে মিমকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে, সে সময়ও মিম তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী বলেছিলেন একজন মহিলা বোরকা পরা এবং একজন পুরুষ তাঁর শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়েছে।’

পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মিমের পরিকল্পনা ছিল তাঁর শাশুড়ি এবং স্বামী তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে এমন একটি বিষয় প্রমাণ করবেন। সে কারণেই ঘটনার পর তাঁর শাশুড়ি একমাত্র শত্রু বলেও বক্তব্য দেন। ওই ঘটনার পরপরই মিমের শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

তবে মিমের শাশুড়ি নির্দোষের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলায় যেহেতু তাঁর শাশুড়িকে প্রধান আসামি করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরা এখনই তাঁকে নির্দোষ বলতে পারি না। এখনো তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে যদি তাঁর সম্পৃক্ততা না থাকে, তাহলে চার্জশিটে তাঁর নাম বাদ গেলে, পরবর্তী পদক্ষেপ আদালত নেবেন।’

উল্লেখ্য, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা সাতানী গ্রামের বাসিন্দা প্রিন্স ও সুমি আক্তার দম্পতি উপজেলা সদরের শাহজাহান দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ৮ জুন দুপুরে মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত হঠাৎ ঘরে ঢুকে গৃহবধূ সুমির হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় বলে দাবি করেছিলেন হালিমা আক্তার মিম। এ সময় মিমের চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে গিয়ে মিমকে উদ্ধার করে। মিমকে প্রথমে বরিশাল এবং পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে মিমের মৃত্যু হয়।


আরও খবর